সিলেটবাসী পেল মেট্রোপলিটন কারাগার
সাদিকুর রহমান সোহেল:
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছে সিলেট নগরীর কারাগারে থাকা কারাবন্দিরা ও তাদের স্বজন।
পুরাতন জেলখানায় চালু করা হয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন কারাগার।
সিলেটে জেলখানা অনেক দূরে থাকার কারণে
মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের স্বজনরা বিশেষ করে বয়স্ক লোকজন যেতে পারত না এক নজরে স্বজনের মুখ দেখতে। যায় কোন সম্ভব। শুধু তাই নয় পুলিশের ক্ষেত্রেও আসামি চালান করতে খরচ কমে এসেছে সিলেট মেট্রোপলিটন কারাগার চালু হওয়াতে । একদিকে যেমন স্থান টিকে পুরাতন জেলখানা হিসেবে সবাই চিনে, অন্যদিকে জেলরোড জায়গাটি পড়েছে মহানগরের একটি মিডিল স্থানে যা শহরকেন্দ্রিক। তাতে করে জনসাধারণের সুবিধা হয়েছে
রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ”-এ স্লোগান নিয়ে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের স্থানান্তর করা হয় সিলেট মেট্রোপলিটন কারাগারে। দীর্ঘ আট বছর আগে এই কারাগারের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সে ফাইল টি তৎকালীন সময় আলোর মুখ দেখেনি।
বর্তমান সরকারের আমলে সংশ্লিষ্টদের পত্র চালাচালির পর কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়। নগরীর বন্দর বাজার এলাকায় যদিও এটি ২৩৬ বছরের পুরনো জেলখানা।
২০০৯ সালে বাদাঘাট এলাকায়
কারাগার স্থানান্তরিত হয় বাদাঘাট এলাকায়।
সিলেট বিভাগের কারা উপ-মহা পরিদর্শক মোঃ ছগির মিয়া বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের জন্য সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ চালু হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই প্রক্রিয়া থমকে যায়। সরকার পতনের পর গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই প্রেক্ষিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি কারা অধিদপ্তর থেকে “সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ ” চালুর নির্দেশ প্রদান করা হয়। অথচ সিলেট জেলা ভেঙ্গে ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যক্রম। এর আগে বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯৫ সালে চারটি জেলা নিয়ে গঠিত হয় সিলেট বিভাগ। অন্যদিকে ২০০২ সালে গঠন হয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন। আর সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। এরপরও সুযোগ সুবিধা পায়নি মহানগরের (মেট্রোপলিটন) এলাকার বন্দিরা।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১৭৮৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকের প্রতিনিধি সিলেটের কালেক্টর জন উইলসন সিলেট নগরের ধোপাদীঘির পারে ২৪ দশমিক ৬৭ একর জায়গায় নির্মাণ করেন সিলেট কারাগার। এতে তৎকালীন এক লাখ রুপি ব্যয় হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বন্দিদের ক্ষেত্রে চারটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে মামলা বা আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা, দ্বিতীয়তঃ আইনজীবী ও কোর্ট পুলিশের ভূমিকা, তৃতীয়তঃ বিচারকের ভূমিকা এবং সর্বশেষ আসলে কে কারাগারে প্রেরণ করা হলে জেল পুলিশের ভূমিকা। আর এই সর্বশেষ ধাপই মেট্রোপলিটন বন্দিদের জন্য ছিল বৈষম্য। অবশেষে সেই বৈষম্য থেকে বের হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের ভোগান্তি দূর হয়েছে
। এইদিন থেকেই মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের আর শহরতলীর বাদাঘাট যেতে হচ্ছে না।
নতুন করে চালু হতে যাওয়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার- দুই থেকেই তাদেরকে আদালতে আনা নেয়া করা হচ্ছে । ইতিমধ্যে এধরনের সকল প্রকার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপ-কারা মহাপরিদর্শক মো: ছগির মিয়া সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
যা১৬ ফেব্রুয়ারি স্মারক নং ৫৮.০৪.৯১০০.০৬৬.০১.০০১.২০২৫-৫৫৮ পত্রে কারা উপ মহা পরিদর্শক সিলেট বিভাগ, সিলেট মো: ছগির মিয়া স্বাক্ষরিত বার্তায় নবশিষ্ট জনবলের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার ১ ও ২ এ বন্দী রাখার বিভাজন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেয়া পরিপত্র মতে সিলেট মেট্রোপলিটন কারাগার পৃথক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
পৃথক একটি স্মারক নং ৫৮.০৪.৯১০০.০৬৬.০১.০০১.২০২৪-২২২৯ কারা মহাপরিদর্শক মো ছগির মিয়া স্বাক্ষরিতপত্র মতে শহরগুলোর কারাগারকে মেট্রোপলিটন কারাগার ও জেলা কারাগারকে আলাদা করুন প্রসঙ্গে নিশ্চিত হওয়া যায় বিস্তারিত।
সরকারের অনুশাসন অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষের বিশ্লেষণে মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের মামলার ফাইল প্রকৃত পর্যালোচনা করে দেখা যায় মেট্রোপলিটন কারাগার গুলোতে দুই ধরনের বদ্ধি রয়েছে। ক) আদালত গুলোর বন্দিখ) মেট্রোপলিটন ব্যতীত আদালত সমূহের বন্দি।
মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোতে বর্তমানে হাজতে বন্দির সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। সেটি মোকাবেলা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে।
চৌকস কারা কর্মকর্তাদের বিশ্লেষণ মতে মেট্রোপলিটন এলাকার বন্দিদের পৃথক রাখার ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় কারাগারে বসে গ্রামের সহজ সরল বন্দিগন শহরের টাউট- বাটপারদের পাল্লায় পড়ে ছোট অপরাধ করে জেলে এসে দাগূী অপরাধী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলছে।
তাই বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরাধী সংখ্যাও। এমন বিষয়গুলোসরকরের নানা সংস্থার তদন্তে ও মিডিয়া রিপোর্টে উঠে এসেছে। তাই সিলেটের পুরাতন কারাগারকে মেট্রোপলিটন কারাগার হিসেবে চালু করা কারা কর্তৃপক্ষের যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন সিলেট মহানগরের সচেতন জনসাধারণরা।
কারা কর্তৃপক্ষপর পত্র বিশ্লেষণে জানা যায় , ১৯৭৬ সালে মেট্রোপলিটন আইন মোতাবেক ঢাকা ও পরবর্তীতে অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকার অপরাধ, মামলার জট বিচারিক প্রক্রিয়ায় গতি আনতে মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ ও প্রসিকিউশন কে মেট্রো অঞ্চল ও জেলায় ভাগ করা হয়। এতে করে জনসাধারণের অনেক উপকার হয় নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বিচারিক প্রক্রিয়ায় ও আসে পরিবর্তন।
কিন্তু কিছু জুডিশিয়ার প্রক্রিয়ায় চতুর্থ ধাপের
কারাগার গুলোকে এখনো ভাগ না করায়
মেট্রো এলাকার কারাগার গুলোতে ২-৩ গুন চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা আজও চলমান।
কারা বিভাগের মূল সমস্যা দূর করতে মেট্রোপলিটন শহরগুলোর কারাগার গুলিকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে একাধিকবার করার পরিকল্পনা নিলে কারা বিভাগের সমস্যা তেমনটা থাকবে না বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন।